মুনিরা ও সারাহ শিক্ষার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করছিল। মুনিরা বললো, ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা ও চারিত্রিক উৎকর্ষের জন্য শিক্ষা অতীব প্রয়োজন। সারাহ বললো, আল্লাহর দীনকে সমুন্নত রাখা, মানবতার বিকাশ এবং সুন্দর জীবনযাপনের জন্য মহানবি (স) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর প্রতি বিদ্যা শিক্ষা করা ফরজ।’
- সংস্কৃতির আরবি শব্দ কী?
- মক্তব শিক্ষা প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা করো।
- উদ্দীপকের মুনিরার বক্তব্য কোন শিক্ষার প্রতি ইঙ্গিত করেছে? ব্যাখ্যা করো।
- সারাহর শেষ উক্তির মাধ্যমে যে শিক্ষার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে তার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
প্রশ্নের উত্তর
ক. সংস্কৃতির আরবি প্রতিশব্দ সাকাফাহ (Zila)
খ. মুসলিম ছেলেমেয়েদেরকে কুরআন, হাদিস ও ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য মক্তব শিক্ষা প্রয়োজন। মক্তব বলতে সাধারণত সে প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়, যেখানে মুসলিম শিশুদের কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস ও ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। পবিত্রতা-অপবিত্রতা, হালাল-হারাম প্রভৃতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক জ্ঞান শিশুরা মক্তবেই পেয়ে থাকে । ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশেও মক্তব ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
গ. উদ্দীপকের মুনিরার বক্তব্য ইসলাম শিক্ষার প্রতি ইঙ্গিত করেছে ।
যে শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষা দেওয়া হয় তাকে ইসলাম শিক্ষা বলে। এটি কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক একটি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা। মানুষকে ইসলামের বিধিবিধান, আল্লাহর ইবাদতের পদ্ধতি শেখানো, জীবনের সর্বক্ষেত্রে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা এবং ব্যক্তির চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন ইসলাম শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য যা মুনিরার বক্তব্যে ফুটে উঠেছে ।
উদ্দীপকের মুনিরা বললো, ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং চারিত্রিক উৎকর্ষের জন্য শিক্ষা অতীব প্রয়োজন। তার এ বক্তব্য ইসলাম শিক্ষার উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ইসলাম শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো মানুষকে উত্তম চরিত্রবান ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা । ইসলাম শিক্ষা মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথ প্রদর্শন করে এবং অন্যায় ও অসত্য থেকে দূরে রাখে। এ শিক্ষা ব্যক্তির পাপপ্রবণতা ও মানবিক ত্রুটিসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে তার চরিত্রকে সুন্দর করে। এ শিক্ষা মানব চরিত্রের পাশবিকতাকে নির্মূল করে কাঙ্ক্ষিত মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। সুতরাং বলা যায় যে, মুনিরার বক্তব্যে ইসলাম শিক্ষার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ।
ঘ. সারাহর শেষ উক্তির মাধ্যমে দীনি ইলম তথা ইসলাম শিক্ষার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে ।
মুসলিমদের জন্য ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন, আল্লাহর ইবাদতের নিয়মকানুন ও পদ্ধতি জানা, আল্লাহর দীনকে সমুন্নত রাখা, মানবকল্যাণ সাধন এবং সুন্দর জীবনযাপনের জন্য ইসলাম শিক্ষা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক; যা সারাহর বক্তব্যে ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকের সারাহ বললো,
মহানবি (স)”] আল্লাহর দীনকে সমুন্নত রাখা, মানবতার বিকাশ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য জ্ঞানান্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ।
‘ সারাহর এ বক্তব্যের মাধ্যমে মূলত ইসলাম শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । দীনি ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে ফরজের বিধান দুই ধরনের। যথা- ফরজে আইন বা অবশ্যই পালনীয় ফরজ এবং ফরজে কিফায়া বা সামষ্টিক বাধ্যবাধকতা। উল্লিখিত হাদিসের মাধ্যমে দীনের মৌলিক জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ করা হয়েছে। দীনের গভীর জ্ঞানার্জন করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
প্রত্যেক সমাজের কিছু লোককে এ জ্ঞান অর্জন ও এ নিয়ে গবেষণা করতে হবে। অন্যথায় সমাজের সবাই গুনাহগার হবে। মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন ও সুখী, সুন্দর জীবনযাপনের জন্য ইসলামের জ্ঞানার্জন করা প্রয়োজন।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আল্লাহর দীন ইসলামকে সমুন্নত রাখা এবং মানুষের জীবনের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।